নাটোর, জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধ লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জন্যে সরকার প্রায় পাঁচ কোটি টাকার কৃষি সহায়তা বরাদ্দ দিয়েছে। রবি মৌসুমে পুনর্বাসন এবং রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় সার ও বীজের মাধ্যমে এ সহায়তা যাবে কৃষকের কাছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তিন পর্যায়ের বন্যায় জেলায় মোট ৬২ হাজার ২৪৪ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।সবজি , আউশ, বোনা আমন, রোপা আমন ও এর বীজতলা এবং মাসকলাই ডালের মোট আট হাজার ৭৫১ হেক্টর জমির ফসল বিনস্ট হয়। এরফলে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হয় ৮২ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। ৮ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রথম পর্যায়, ২১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ে চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আঘাত হানে বন্যা।
সরকার ২০২০-২০২১ রবি মৌসুমে পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় জেলার মোট ৩৬ হাজার কৃষককে প্রদান করা হবে বীজ ও সার বাবদ মোট তিন কোটি তিন লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। এরমধ্যে প্রত্যেক কৃষকের জনপ্রতি এক বিঘা জমি আবাদের জন্যে গম, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, মসুর, খেসারি, টমেটো অথবা মরিচের মোট ২৩৩ টন বীজ প্রদান করা হবে। এসব শস্য আবাদের জন্যে প্রয়োজনীয় ২৮ লক্ষ ৭০ হাজার টন ডিএপি এবং ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার টন এমওপি সার প্রদান করা হবে।
অন্যদিকে ২০২০-২০২১ রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় সুফলভোগী কৃষকের সংখ্যা ১৬ হাজার ৬০০ জন। প্রতিজন কৃষকের বোরো ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ অথবা গ্রীস্মকালীন মুগ ডালের এক বিঘা জমি আবাদের জন্যে মোট ৯৯ হাজার ৭৫০ টন বীজ এবং দুই লক্ষ এক হাজার টন ডিএপি সার ও এক লক্ষ ৩৩ হাজার টন এমওপি সার প্রদান করা হবে। এজন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে মোট এক কোটি ৮৬ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকার উপর গুরুত্ব আরোপ করে জেলার সাতটি উপজেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন/ প্রণোদনা বাস্তবায়ন কমিটি উপজেলার সুবিধাভোগী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের তালিকা চূড়ান্ত করে। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত জেলা কমিটি গত ২০ অক্টোবর পুনর্বাসন কর্মসূচীর কৃষক তালিকা এবং ১ নভেম্বর প্রণোদনা কর্মসূচীর কৃষক তালিকা অনুমোদন করে। সভায় সভা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি মোঃ শাহরিয়াজ।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বরাদ্দকৃত বীজ ও সার হাতে পেলে কৃষক পর্যায়ে দ্রুত বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এসব কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হবে। আগামী সপ্তাহে ভুট্টা,খেসারী ও গম বীজ ও সার বিতরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বাসস’কে বলেন, কৃষি-বান্ধব বর্তমান সরকার সব সময় কৃষকের পাশে থাকে। এসব উপকরণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বন্যার ক্ষতি কিছুটা পুরণ করতে পারবেন। পাশাপাশি প্রদত্ত উপকরণ প্রদানের ফলে ঐসব শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।