অষ্ট্রেলিয়ার সাথে নতুন নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে তিক্ততার জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ফ্রান্সের সাথে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাথে দ্রুত বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রোববার ফ্রান্সের উৎকন্ঠা কমানোর চেষ্টা করে বলেছেন, এটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোন চুক্তি নয় বিশেষ করে আমাদের ফরাসী বন্ধুদের তো নয়ই।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে তিনি আরো বলেন, ফ্রান্সের সাথে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে যার গুরুত্ব অনেক।
ফরাসী সরকারের মুখপাত্র গেব্রিয়েল আতাল বলেছেন, বাইডেন ম্যাক্রোঁর সাথে ফোনে কথা বলার অনুরোধ জানি য়েছেন।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উভয়ের কথা হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি হয়। এইউকেইউএস নামের এই চুক্তির অধীনে অষ্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রযুক্তি সরবরাহ করবে ওই দুই দেশ।
কিন্তু এর আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের সাবমেরিন সংশ্লিষ্ট চুক্তি হয়েছিল। যার আর্থিক মূল্য চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার চুক্তি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ফ্রান্স। এ ছাড়া দুই দেশের সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার নতুন এই চুক্তির মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে বিষয়টি জানানো হয়।
এ প্রেক্ষিতে ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ করেছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান শনিবার অভিযোগ করে বলেছেন, পারমাণবিক সাবমেরিন বিক্রির চুক্তিকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যে বলে সংকট বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই চুক্তির প্রতিবাদে স্থানীয় সময় শুক্রবার দেশ দ’ুটিতে নিযুক্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছিল ফ্রান্স। টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স-২-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে দেশ দু’টি ফ্রান্সের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমানজনক আচরণ করেছে।
জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান বলেন, নতুন এই চুক্তি মিত্র দেশ গুলোর সম্পর্কের মধ্যে ‘মারাত্মক সংকট’ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে আনলাম। এটি একটি গুরুতর রাজনৈতিক পদক্ষেপ।’
এদিকে অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন রোববার ক্যানবেরা মিথ্যে বলেছে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি আমাদের কৌশলগত জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অন্যদিকে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক বাতিল করেছে। চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
সূত্র জানায়, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেসের মধ্যে দুই দিনের ওই বৈঠক আপাতত হচ্ছে না।
বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ব্যাপকভাবে চীনের উত্থানকে প্রতিহত করার লক্ষ্য হিসেবেই দেখা যায়।
এ দিকে উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ার করে বলেছে, চুক্তিটি এই অঞ্চলে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দিতে পারে।