শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন চামড়া শিল্প নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকল্পে স্থায়ী কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু ঈদ-কেন্দ্রিক কার্যক্রম দিয়ে এরকম একটি বৃহৎ এবং সম্ভাবনাময় শিল্প-খাতের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।’ শিল্পমন্ত্রী আজ বুধবার বিকালে রাজধানীতে চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের ৫ম সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ভার্চুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
টাস্কফোর্সের আহবায়ক ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে ভার্চূয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ অনলাইনে সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, চামড়ার বাজার তৈরি হয়েই আছে। বাইরে থেকে গবাদিপশু কিনতে হচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সহজেই খাতটিকে লাভজনক করার সুযোগ আছে। সেই সাথে এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব। ঈদ মৌসুমে চামড়া সরবরাহ বেশি হওয়ায় অনেক সময় ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য প্রয়োজনে সরকারিভাবে চামড়া কেনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে চামড়া কিনে লবণ দিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে প্রান্তিক পর্যায়ে চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যাবে বলেও মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সভায় চামড়া শিল্পের বিকাশকে সুসংহত এবং সাবির্ক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ও টেকসইকরণে ‘চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন’, দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণাগার স্থাপন, প্রয়োজনীয় লবণ প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে লবণ ডিলার নিয়োগ, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করতে সকল স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ‘কেন্দ্রিয় মনিটরিং সেল’ গঠন, সঠিকভাবে কোরবানীর চামড়া ছাড়ানো, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার বিষয়গুলো, বিজ্ঞাপন/টিভিসি আকারে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্পচার/প্রচারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়নে এবং রপ্তানী বৃদ্ধিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য সবরকম সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আসন্ন প্রবিত্র ঈদুল আজহা ২০২২-কে সামনে রেখে চামড়া কেনা-বেচা সংক্রান্ত বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে তিনি জানান।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী বলেন, সাভার ট্যানারি শিল্প এলাকার কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য যথাযথ নিষ্কাশন ও কমপ্লায়েন্স অর্জন সাপেক্ষে ট্যানারি মালিকদের পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ছাড়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ট্যানারিগুলোকে আধুনিকায়ন করার ওপর জোর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কোরবানীকৃত পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবনের পর্যাপ্ত চাহিদা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোরবানীর পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিল্পসচিব বলেন, আসন্ন ঈদ উল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানীর চামড়া সংগ্রহ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, আসন্ন ঈদ উল আজহা ও তৎপরিবর্তী সময়ে সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি, বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।