দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো. এনামুর রহমান বলেছেন, দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ধারণা থেকে সরে এসে দুর্যোগে পূর্ব প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন সুরক্ষা ও দুর্যোগ উত্তর পুনর্গঠনে প্যারাডাইম শিফটে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আজ রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে দক্ষিণ সুদানের মানবিক বিষয়ক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আলবিনো আকোল আটাক মায়োম এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় যুগোপযোগী ও সমন্বিত দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, বিধি, পরিকল্পনা ও নীতিমালার আলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ও সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কর্মসূচির মূল ভিত্তি গড়ে গেছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও সুশাসনে আজ তা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, দেশবাসীকে আগাম সর্তকর্বাতা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে। এবছর সর্বোচ্চ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় আমাদের আগাম সতর্কতা, প্রস্তুতি ও সাড়াদান আরেকটি নজির সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৮টি জোনে ভাগ করে ঢাকাকে ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে গড়ে তুলতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পে কার্যকর অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ পূর্বক সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জরুরি সাড়াদানকারী সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০৭১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগজনিত ক্ষয়-ক্ষতি প্রশমনকে প্রাধান্য দিয়ে “বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০” প্রণয়ন করেছি। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করবে এ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে দুর্যোগের মাত্রা ও প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে ৬টি দুর্যোগ হটস্পটে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০' এর প্রথম পর্যায়ে মোট বিনিয়োগের একটা বড় অংশ বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন রোধ, পানিধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও নাব্যতা বৃদ্ধির খরচ হিসেবে ধরা হয়েছে। নদী ড্রেজিং, গ্রীষ্মকালে সেচের পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ, খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারসহ নানাবিধ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি দুর্যোগ মোকাবিলায় এসব বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ 'দুর্যোগ সহনশীল' দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, অতিরিক্ত সচিব মো. হাসান সারওয়ার এবং কে এম আব্দুল ওয়াদুদ উপস্থিত ছিলেন।