জুলাই অভ্যুত্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে চক্ষু এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে রিলিজিয়নস ফর পিস (আর.এফ.পি) নামে একটি সংগঠন।
শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে এই সহায়তা দেওয়া হয়।
‘রিলিজিয়নস ফর পিস’ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি তরুন তপন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সহায়তা প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন জামিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য মো. মোদাব্বের হোসেন, রিলিজিয়নস ফর পিস বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ সেলিম রেজা, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. মোহাম্মদ আমানুল্লাহ খান, ট্রেজারার অঞ্জন দাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত আনোয়ারুল আজিম বলেন, আমার বাসা কুমিল্লা হলেও পড়াশোনার সুবাধে ফেনীতে থাকি। শুরু থেকে আমি এই আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলাম। ফেনীতে যেদিন তীব্র আন্দোলন হয় সেদিন আমার বাম পায়ে গুলি লাগে। পরে আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আমার অবস্থা উন্নতি না হওয়ায় আমাকে ফেনী থেকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এখানেও চিকিৎসায় আমার উন্নতি না হওয়ায় আমাকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো দুর্জয় আহমেদ বলেন, আমি এই আন্দোলনে দু’টি চোখ হারিয়েছি। প্রথমে আমার একটি চোখ নষ্ট হয়। পরে চিকিৎসার অভাবে আরেকটি চোখ নষ্ট হয়। আমি দেশের অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ভালো চিকিৎসা পাইনি। পরে নিজ উদ্যোগে ভারতের চেন্নাই, থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। কিন্তু চোখের নার্ভ দুর্বল হওয়ার কারণে চোখ ভালো হয়নি। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনে যারা আহত তারা অসহায়। নিজ উদ্যোগে হলেও তাদের পাশে দাড়াবেন।
ওমর ফারুক নামে আরেক আহত বলেন, আমার বাড়ি বগুড়া জেলায়। গাজীপুর আনসার একাডেমির সামনে আহত হই। গত ৪ আগস্ট আমার শরীরে অনেক গুলি লাগে। তার মধ্যে বাম চোখে পাঁচটি, ডান চোখে সাতটি।
আমার চোখের সৃষ্টি ফেরানোর সম্ভাবনা নাই। এই আন্দোলনে যারা আহত এবং নিহত তাদের জন্যই মানুষ এখন কথা বলতে পারতেছে। আমাদের সবাই সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু কেউ সাহায্য করছে না। আমাদের যদি সুসময়ে চিকিৎসা হতো তাহলে অনেকেই সুস্থ হতে পারতো। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা চাই আমাদের আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
রিলিজিয়নস ফর পিস বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ সেলিম রেজা বলেন, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠন কাজ করে। আজকে আমরা আপনাদের যে সহায়তা দিচ্ছি এটা তেমন কিছু না। কথা একটাই আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমাদের এই অনুষ্ঠানের কোন প্রধান অতিথি নেই। আপনারাই আমাদের প্রধান অতিথি।
তিনি বলেন, আমরা নিজেদের ফান্ড থেকে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমরা গত বন্যায়ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের এই সহায়তা শুভেচ্ছা হিসাবে নিবেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। গত ১৬ বছরের অত্যাচার নির্যাতনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। জুলাই বিপ্লব গত ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিক ফসল। এই ১৬ বছরে ইলিয়াস আলীসহ অনেক মূল্যবান জীবন আমাদের হারাতে হয়েছে। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। সরকারী হিসাবে কম হলেও বিভিন্ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী জুলাই বিপ্লবে ২ হাজারের বেশি জীবন দিয়েছেন। ২০ হাজারের বেশি মানুষের অঙ্গহানি হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের তালিকা দেখি তাহলে দেখবো অর্ধেকের বেশি হচ্ছে ভুয়া তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। একই প্রবণতা জুলাই বিপ্লবেও দেখা যাচ্ছে। ছয় মাসও হয়নি অনেকে আহতদের তালিকায় ঢুকে যাচ্ছে। যারা আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের সাথে এটি প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি আরো বলেন, যারা গত ১৬ বছরে অপকর্ম করেছেন তাদের নিয়ে আমরা কথা বলবো। আমাদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়টি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু আগস্ট মাস শেষ হতে না হতেই শাহবাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে অরাজকতা করা হচ্ছে। কিন্তু এর পিছনে কারা জড়িত সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি না। এভাবে জাতির উন্নতি হবে না। আমাদের দল মত নির্বিশেষে একসাথে কাজ করতে হবে।
উল্লেখ্য, রিলিজিয়নস ফর পিস (আর.এফ.পি) জাতিসংঘ এফিলিয়েটেড একটি অরাজনৈতিক আন্তর্জাতিক সংগঠন। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি ‘ডিফারেন্ট ফেইথ, কমন গোল ফর পিস’ লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে চলেছে। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধারণত সভা-সেমিনার ও আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে (বন্যা/খরা/নদী ভাঙ্গন) ক্ষতিগ্রস্তদের কিংবা দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মাঝেও সামর্থ্য মোতাবেক শিক্ষা সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।