নিজস্ব প্রতিনিধি:-ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই তরুণ এ মেয়র প্রার্থী বেড়িয়ে পড়েন গণসংযোগে। পাড়া মহল্লার অলি-গলিতে, ভোটারদের বাসা-বাড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বরিশালের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। বর্ধিত ও গুচ্ছগ্রামের হাঁটুসমান পানি পেরিয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ ভোটারদের কাছে কে কি উন্নয়ন করেছেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন।
বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার ও তার পরিবারের সদস্যরা এবার বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে অধিক পরিশ্রম করছেন। সরওয়ার ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা এবার রিজার্ভ ভোটে ভরসা করতে পারছেন না। বিগত নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামে ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে ছিলো বিএনপি’র প্রার্থী। এবার চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন মেয়র নির্বাচনে হেফাজতের বরিশাল আমির মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুবকে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী করেছে। নগর সংলগ্ন চরমোনাই’র দরবার হওয়ায় বরিশাল নগরীতে তাদের কর্মী-সমর্থক রয়েছে অপর দলগুলোর কাছাকাছি। সাথে যুক্ত হয়েছে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীরা। চরমোনাইর পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম প্রচার-প্রচারনায় থাকায় ভোটের ব্যবধান কমে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজত যে ভোট পাবে তার অধিকাংশই বিএনপি’র ভোট। বিএনপি’র রিজার্ভ ভোটের এবার ইসলামী আন্দোলনের হানা পড়তে পারে। এছাড়া নতুন ৩১ হাজার ভোটারকে কাছে টানতে সচেষ্ট মেয়র প্রার্থীরা।
২০১৩ সালের নির্বাচনে বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। এবার ভোটার হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। ভোটার বেড়েছে ৩০ হাজার ৯০৯ জন। নতুন ভোটারের মধ্যে ১৩ হাজার ৮১১ জন পুরুষ ও ১৭ হাজার ৯৮ জন নারী। এ ছাড়া অন্যান্য ভোটারের মধ্যে ৩০ বছর বয়সীর সংখ্যা ৩৬ ভাগ। সে হিসেবে প্রায় এক লাখ অর্থাত্ অর্ধেকের বেশি ভোটারই ১৮-৩০ বছরের বয়সী। তাই তরুণ ভোটারদের দিকে আগ্রহ বেশি প্রার্থীদের। নতুন ভোটারদের নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, নতুন এবং তরুণ ভোটারদের মাঝে সাড়া পেয়েছি। তরুণদের কর্মসংস্থান ও মাদক থেকে সরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন করব। নির্বাচিত হলে তরুণদের নিয়ে তাদের স্বপ্নের বরিশাল গড়ে তুলব।
নতুন ও তরুণ ভোটারদের বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, সাধারণ নগরবাসীর পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের স্বার্থে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত যুগোপযোগী আধুনিক নগরী গড়ে তোলা হবে এবং তরুণদের ক্রীড়ার উন্নয়নে কাজ করা হবে।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব বলেন, তরুণ ও নতুন ভোটাররাই আগামীর স্বপ্ন। তাদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই আমার নির্বাচনী ইশতেহার।
জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তীও নতুন-তরুণ ভোটারদের মানসিক বিকাশের জন্য কাজ করবেন বলে জানান।
বড় দু’দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগ
আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অনেকেই আসা-যাওয়া করলেও অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার প্রতিদিনই নগরীতে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা নকশে বন্দি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় ত্রাণ সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি নগরীতে গণসংযোগ করেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সাথে গতকাল যুক্ত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা’র মহাসচিব খন্দকার গোলাম মুর্তজা, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন খান, মেজবা উদ্দিন ফরহাদ।
নিজ কেন্দ্রে ইভিএম চান সাদিক আব্দুল্লাহ
বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটাই আমার প্রত্যাশা এবং তাই নিজের কেন্দ্রসহ আরো দুইটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচন অফিসের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর সিএন্ডবি রোডে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই কথা বলেন তিনি।