প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝ বয়সী মোঃ ছিরু মোল্লার (৫৬)। এখনো প্রচুর পরিশ্রম করেন। মেধা ও শ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছেন নার্সারী। এ নার্সারীতেই তিনি দিনের অধিকাংশ সময় কাটান। এ নার্সারী থেকে তিনি প্রতি বছর অন্তত ২২ লাখ টাকার ফলজ,বনজ, ওষুধি ও ফুল গাছের চারা বিক্রি করেন। আর এ চারা বিক্রি করেই তিনি বছরে অন্তত ৮ লাখ টাকা আয় করেন। নার্সাারীন আয় দিয়েই মোঃ ছিরু মোল্লার সংসার চলে। সংসার চালানোর পর বাড়তি টাকা সঞ্চয় করেন। নার্সারী করে তিনি যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি খুব ভালো আছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার চরপদ্মবিলা গ্রামে মোঃ ছিরু মোল্লার নার্সারী।
মোঃ ছিরু মোল্লার নার্সারীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অন্তত ১ একর জমি জুড়ে তার বিশাল নার্সারী। এ নার্সারীতে আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, মাল্টা, কমলা, এভোকাড, নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমরা, সফেদা, ররই, নিমসহ ১৫০ প্রজাতির দেশি-বিদেশী বনজ, ফলজ , ওষুধি ও ফুলের গাছের চারা রয়েছে। সেখানে মোঃ ছিরু মোল্লার সাথে আরো ১২ জন কাজ করছেন। তারা নার্সারীর গাছের চারা পরিচর্যা ও গুটি কলম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মোঃ ছিরু মোল্লার নার্সারীতে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। গাছের চারা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এ নার্সাারী থেকে ক্রেতাদের চারা কিনে নিতে ও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এ নার্সারীর বদৌলতে এখানে অন্তত ১২ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নার্সারীর মালিক মোঃ ছিরু মোল্লা বলেন, চাল ,ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মুদি ব্যবসা করতাম। এ ব্যবসায় প্রচুর বাকি দিতে হত। ২৩ বছর আগে মুদি ব্যবসায় লস হয়। পরে এ ব্যবসা বন্ধ করে দেই। নিজের জমিতে আমের বাগান কারার উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০০০ সালে আম বাগানের জন্য আমের চারা কিনতে যাই। সেখানে নার্সারী মালিকের পরামর্শে ১ ট্রাক আমের চারা নিয়ে আসি। এ চারা দিয়ে নিজে একটি আম বাগান করি। বাদ বাকী আমের চারা বিক্রি করে অন্তত ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। তারপর নার্সারী ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ি। এক পর্যায়ে গ্রামের প্রতিবেশিদের জমি লিজ নিয়ে নার্সারী গড়ে তুলি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমার নার্সারী সম্প্রসারণে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সব ধরণের সহযোগিতা করছে। আমার নার্সারীতে ১২ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আমি প্রতি বছর ২২ লাখ টাকার গাছের চারা বিক্রি করি। এখান থেকে আমার বছরে অন্তত ৮ লাখ টাকা লাভ থাকে।
ছিরু মিয়া বেকার যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, জমি লিজ নিয়ে নার্সারী করে বেকার যুবকরা স¦াবলম্বী হতে পারেন। নার্সারী একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় আসলে ভালো করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম খায়রুল বাসার বলেন, নার্সারী ব্যবসা বেশ লাভ জনক ব্যবসা । মোঃ ছিরু মিয়া আমাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ফল ও ফুলের চারা উৎপাদন করেন। আমরা তাকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করি। ২৩ বছর ধরে তিনি নার্সারী করে সফল হয়েছেন। নতুন প্রজন্ম এ ব্যবসায় আসলে তারাও লাভবান হবেন।
কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর গ্রামের খোকন মন্ডল (৫০) বলেন, চরপদ্মবিলা গ্রামের মোঃ ছিরু মোল্লার কাছ থেকে আম, নারকেল, মাল্টা, কমলা, পেঁয়ারা ও লেবুর চারা নিয়ে ৪ বছর আগে ২ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করেছি। এ বাগানে এখন সারা বছর ফল ধরছে। মোঃ ছিরু মোল্লা আমাকে ভালো জাতের ফলের চারা দিয়েছেন। তাই বাগান ভালো হয়েছে। আমার দেখাদেখি অনেকেই ফলের বাগান করছেন। এ কারণে আমাদের এলাকায় ছিরু মোল্লার নার্সারীর গাছের চারার চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চর পদ্মবিলা গ্রামের মোশারফ আলী (৪৫) বলেন, ছিরু ভাই নার্সারী করার পর এখানে শ্রমিকের কাজ করি। এখানে কাজ করে প্রতিদিন ১০০০ টাকা পরিশ্রমিক পাই। এ টাকা দিয়ে সংসার চালাই। নার্সারীতে সারা বছর কাজ থাকে। তাই এখানে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালই আছি। আমার মতো এখানে আরো ১১ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। তারাও বেশ ভালো আছেন।