ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১১-১৯
  • ২৩৪৩৪৬৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান তাওহীদ জানেন না তিনি আর কোনদিন সুস্থ হবেন কি না। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবেন কি না আদৌ। কারণ সঠিক চিকিৎসার অভাবে আজ তার পা অকেজো হওয়ার পথে।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে স্বাধীনতার আনন্দে উল্লসিত হাজারো মানুষের সাথে রাজপথে নেমেছিলেন তাওহিদ হোসেন (৪০)। বিকেল চারটার সময় রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার উল্টো দিকে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের গুলিতে তার পা ঝাঁঝরা হয়ে যায়।
সম্প্রতি তিনি জানান, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু প্রচুর আহত-নিহতের ভীড়ে তাকে শুধু ব্যথানাশক ওষৃুধ দিয়ে সাত দিন পরে যেতে বলা হয়। একে তো গুলিবিদ্ধ, তার ওপর রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই। অনেক কষ্টে দক্ষিণখানের বাসায় ফেরেন তিনি। ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন। পরে সহ্য করতে না পেরে এক পরিচিত’র মাধ্যমে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে যান।  ঘটনার পাঁচ দিন পর ১০ আগস্ট তাওহীদের পা থেকে গুলি বের করা হয়। এরপরে আর কোন রকম উন্নত চিকিৎসা হয়নি। ইতিমধ্যে তার পায়ের জখম শুকিয়েছে আর প্যারাসিটামল খেয়ে কোনমতে ব্যথা সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন এই বীর যোদ্ধা।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার উপলদিয়া গ্রামের সন্তান তাওহীদ। সামান্য কৃষিকাজ করা নূরুল ইসলাম (৬০) ও এলি বেগম (৫৫) দম্পত্তির মেজো সন্তান তিনি। দু’ভাই ও এক বোনের সংসারে অভাব অনটনে বড় হয়েছেন বিধায় বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। জীবিকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। উত্তরার দক্ষিণখানের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফায়দাবাদ গ্রামে একটা রুম ভাড়া নিয়ে কোনমতে তিনি বসবাস করেন। বিয়ে করেছেন জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার মেয়ে শরীফাকে (৩০)। এ দম্পত্তির দু’টি সন্তান। বড় মেয়ে তায়েবাকে (১৪) আর্থিক কারণে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। গ্রামে মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছে তায়েবা। ছোট সন্তানটির বয়স মাত্র ১০ মাস। নাম তাহমিদ। ইতোমধ্যে অর্থাভাবে কুলাতে না পেরে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি একা এই পা নিয়ে কোনভাবে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। কাজ করতে পারেন না। ঠিকমতো হাঁটতেই পারেন না, কাজ করবেন কীভাবে? অথবা তাকে এই অবস্থায় কেই বা কাজ দেবে?
একেবারে অসহায় মানুষটি চিকিৎসার জন্য বা মানবিকভাবে কোন জায়গা থেকেই সহায়তা পাননি। এমনকি পাঁচ আগস্টে যে গুলি লেগেছে, সে গুলিটাও বের করেছেন পাঁচ দিন পর। মাঝের এ কয়টা দিন তীব্র যন্ত্রণায় বারবার কুঁকড়ে গেছেন। কিন্তু কোন চিকিৎসা পাননি বা তার পাশে দাঁড়িয়ে দু’টি সান্ত্বনা দেওয়ার মতোও কোন মানুষ ছিল না।
সরেজমিনে তার বাসায় গিয়ে দেখা গেলো, আশপাশের মানুষজনও ওইভাবে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। একদম নিরীহ, চুপচাপ থাকেন। কেউ কোন খোঁজ খবরও নেয় না। বাড়িওয়ালার সাথে কথা বললাম। তিনিও আর্থিকভাবে কোন রকম সহযোগিতা করতে পারেননি।
তবে তিনি তার ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বললেন, ‘আমি কয়টা রুম ভাড়া দিয়ে খাই। তারপরও আমি ওর কাছ থেকে দুই মাস কোন ভাড়া নেইনি। এখন ও যদি আমাকে ভাড়া না দেয়, আমি চলব কিভাবে?’
যে ছেলেটা রাষ্ট্রের জন্য এত কষ্ট করল, গুলি খেলো। তার কোন খোঁজ-খবর আজ পর্যন্ত কেউ করলো না, এলাকার মানুষের ক্ষোভ এটাই।
সাক্ষাৎকারের সময় প্রতিবেদকের সাথে ছিলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবক মাইনুল ইসলাম মনিম। যিনি আমাদেরকে পথ দেখিয়ে না দিলে এত গলি পার হয়ে তার বাসায় যাওয়া হয়তো বা সম্ভব হতো না। তিনিও একই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করলেন।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের রিপোর্টের ভিডিও ডকুমেন্টস সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তাওহীদের এই সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার সময়ে একেবারে শেষে খুব দুঃখ ভরা মন নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই যে রাষ্ট্রের জন্য রক্ত দিলাম, যে ফ্যাসিবাদকে উৎখাতের জন্য আমরা এতকিছু করলাম, সে রাষ্ট্র আমাদের চিকিৎসার ন্যূনতম ব্যবস্থা তো দূরের কথা, আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। আজকে একশত দিন হল বিপ্লবের, আমার কাছে আজ পর্যন্ত একটা লোক আসেনি। মনে হচ্ছে আপনি প্রথম এবং আপনিই শেষ।
আমাদের খোঁজ-খবর কেউ কোনদিন করবে, সে আশাও আর করি না। জামাত প্রতি শহিদ পরিবারকে ২ লাখ করে টাকা দিয়েছে। আমার আশপাশে রাজপথে ছিল বেশ কয়েকজন যারা শহিদ, তাদের পরিবার এ টাকাটা পেয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, তাহলে কি না মরে আমরা কোন অপরাধ করলাম? জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকার চেয়ে মরলে তো অন্তত আমার পরিবার দুইটা লাখ টাকা পেতো।’
এই তীব্র আক্ষেপ এবং কষ্টের যাতনা এ ধরনের অনেক আহতের মনে। বিপ্লবের ফসল নতুন এই বাংলাদেশ কি তা কোনদিন শুনবে?

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat