প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, চলমান বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প ও কৃষিখাত অগ্রাধিকার পাবে । বৈশ্বিক সংকটকালে দেশের অর্থনীতি চাঙা রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ফেডারেশন ভবনে বাংলাদেশ শিল্ড ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বজুড়েই জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষি ও শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য আবাসিক গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ারও তাগিদ দেন তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি জানান, শিল্প ও সেবা খাতে সরকারের আলাদা নজর আছে। বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প এলাকা বিবেচনায় লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা করা হলেও গৃহস্থলি এলাকায় কিছু শিল্পকারখানা থেকে যায়, যার জন্য এসব কারখানায় লোডশেডিং হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে কোন কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের উচিত কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া। পরিবেশ ঠিক রেখে কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশে। বাংলাদেশও সেদিকে যেতে পারে। তিনি জানান শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও উচিৎ দেশে কয়লা অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দেয়া।
একই সঙ্গে গ্যাস সংকট মোকাবিলায় স্থলের পাশাপাশি, সাগরবক্ষেও অনুসন্ধান পরিচালন, কূপ খননের তাগিদ দেন। এ লক্ষ্যে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ও বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। তিনি জানান, চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাচ্ছে না দেশের শিল্পখাত। এতে শিল্পের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যাসের ওপর একক নির্ভরা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে তিনি মনে করেন।
দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপকভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বাড়ানো-বিশেষ করে নিজস্ব কয়লার ব্যবহার বাড়ানো, সাশ্রয়ী জ্বালানি কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন ।
ক্রান্তিকালীন সংকট মোকাবিলায় একটি জরুরী তহবিল গঠনের দাবি জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক ও বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সমুদ্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গ্যাসের অনুসন্ধানের আহ্বান জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক ও এমসিসিআই’র সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানান বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালের আরো ৬১৮ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এজন্য দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ৫টি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।