নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএসসির বহরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২১টি জাহাজ যুক্ত হবে। বিএসসি বর্তমানে আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিজস্ব অর্থে জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিএসসি’র ৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনায় তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ বিএসসি’র জাহাজ বহরে সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে বিএসসি’র উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে বিএসসি’র বহরে ৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আরো ৪টি নতুন জাহাজ সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মো. জিয়াউল হক অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক নৌপথে নিরাপদ ও দক্ষ শিপিং সেবা প্রদান করা এবং বাংলাদেশের সিংহভাগ আমদানী ও রপ্তানী পণ্য নিজস্ব জাহাজ বহর দ্বারা পরিবহন করার উদ্দেশ্যে বিএসসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী নৌ-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবহন নেটওয়ার্ক এর ভিত গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি তাঁর অধীনে রেখেছিলেন। কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা লাভের মাত্র ৪ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রগামী জাহাজ “বাংলার দূত” এবং এর পর পরই “বাংলার সম্পদ” নামক অপর একটি জাহাজ কর্পোরেশনের বহরে সংযোজিত হয়।
বিএসসি চেয়ারম্যান ও নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে। কয়লা, এলএনজি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ও আর্থিকভাবে লাভজনক বিবেচনায় বিভিন্ন সাইজ ও ধরণের জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে দি বাংলাদেশ ফ্লাগ ভেসেলস (প্রটেকশন অব ইন্টারেস্ট) এ্যাক্ট ২০১৯ পাশ হয়েছে। যার ফলে সরকারি তহবিলে আমদানি বা রপ্তানিকৃত পণ্য সমুদ্রপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে বিএসসি অগ্রাধিকার পাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করা হয়েছে, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কক্সবাজারে আইকনিক রেল স্টেশন, রেললাইন সংযোগ হয়েছে, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, ঢাকা বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, পদ্মা সেতু, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্লানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পায়রা ও মোংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন কাজ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএসসি দীর্ঘদিন পর চট্টগ্রামের কৈবল্যধামে তাদের নিজস্ব জায়গায় আনসার ক্যাম্প ও পাহাড়া চৌকি প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে ১২.৭৭ একর জায়গাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যাবে। সেখানে বিএসসির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জায়গাটি যেহেতু কর্মচারিদের আবাসনের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাই জায়গাটিতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে কর্মচারিদের জন্য আবাসন নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া খুলনার কেডিএ এভিনিউ এলাকায় ১১.৭৩ কাঠা জমির সমস্যা সমাধান করে সেখানে বিএসসির শপিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএসসির নীট মুনাফা হয়েছে ২৪৬ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। কর্পোরেশনের উক্ত লাভের উপর ভিত্তি করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা করে পরিচালনা পর্ষদের ৩১৮তম সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।