এটি এমন এক সময় যখন দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে। ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংক নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আইসিটি বিপ্লব থেকে স্যাটেলাইট বিপ্লবে উত্তরণ তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ উন্মোচিত করেছে।
সরকারের তাত্পর্যপূর্ণ উন্নয়নসাফল্য ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্বীকৃতি প্রশংসার দাবি রাখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের শীর্ষ দশ নেতার অন্যতম। তিনি বিশ্ব মানবতারও প্রতীক। তিনি তার বাবা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ, প্রজ্ঞা, সততা ও রাজনৈতিক দর্শনকে অনুসরণ করে হাঁটছেন। তাই তিনি দেশটিকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিতে পেরেছেন। তার এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কার্যকরীভাবে বাস্তবায়নে সকলের, বিশেষ করে সাধারণ জনগণের অব্যাহত সহযোগিতা প্রয়োজন।
উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশে পৌঁছতে আমাদের কয়েকটি চ্যালেঞ্জ দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যেমন- কমন রিসোর্সপুলে তথা সাধারণ সম্পদের ক্ষেত্রে ও উন্নয়নে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর অধিকতর অধিকার ক্রমাগত স্বচ্ছতার সাথে নিশ্চিতকরণ, মধ্যবিত্তের প্রতি কৌশলগত সহায়তা প্রদান এবং রাজনীতি, সরকার ও বিচার বিভাগের সততা ও দক্ষতা উচ্চমাত্রায় উন্নীতকরণ ও অধিকতর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। অধিকন্তু, প্রয়োজন একটি দ্রুত বর্ধনশীল তরুণ সমাজের কর্মমুখী দক্ষতার বিকাশ ও উদ্যোগতার মনোভাব গড়ে তোলা এবং তাদের জন্য ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। বৃহত্তর দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য একটি সক্রিয় ও ক্রমাগত স্থিতিশীল পরিবেশের বিকাশ সাধন। আরও প্রয়োজন ক্রমবর্ধমান শহুরে শ্রমশক্তির কৌশলগত, রূপান্তরমূলক ও কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ও দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও কার্যকরী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। অব্যাহতভাবে তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল মেধাবী নেতৃত্ব বিকাশের মাধ্যমে ক্রমাগত রাজনৈতিক সংস্কার ও মানোন্নয়ন করা।
সুনির্দিষ্টভাবে এই সার্বিক প্রচেষ্টায় বিশেষ অন্তরায় হয়ে কাজ করে সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অপরিমেয় ত্যাগ-তিতিক্ষা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা আরও বহুগণ বেগবান হবে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন কাঠামোর ভিত আরও অনেক শক্তিশালী হবে যদি মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠন করা যায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করতে হলেও এর বিকল্প নেই। তাত্ত্বিকভাবে এগুলো একইসঙ্গে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগুলোর কার্যকরী সমাধান চান। তিনি জাতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করেছেন এবং এব্যাপারে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার এখন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। মাদকমুক্ত সমাজের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। চরম বিপর্যয়কারী মাদকের উত্স আন্তর্জাতিকভাবে নির্মূল, আমদানি সম্পৃক্ত রাঘব বোয়ালদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিরোধ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও যুব সমাজকে হতাশা থেকে উত্তরণে কার্যকরী কর্মসূচি গ্রহণ এবং সময় উপযোগী আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী পদক্ষেপ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এটি হবে অত্যন্ত জটিল বিষয়। কারণ চুরি তো কেউ জানিয়ে বা প্রমাণ রেখে করতে চায় না। তবে এক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াবে রাজনৈতিক সংস্কার। ভূত আগে শস্য থেকেই তাড়াতে হবে। মাদক ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুর্নীতিও এখানে একটি চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ স্থানীয় সন্ত্রাসবাদকে কিছুটা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাই মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিকে সর্বতোভাবে ধীক্কার জানানো প্রয়োজন। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজন রাষ্ট্রের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।