• প্রকাশিত : ২০২২-১০-০৬
  • ২৮৬ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেছেন, অসহায়, দুস্থ ও গরীব বিচার প্রার্থীদের আইনি সেবা দেয়ার জন্য লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 
‘লিগ্যাল এইড ইন বাংলাদেশ : সার্ভ হিউম্যানিটি অ্যান্ড সেভ সোসাইটি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম আজ এ কথা বলেন। 
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩১৫ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, আইন ধনীদের জন্য বেশি এগিয়ে চলে। কারণ হলো ধনীদের অর্থ আছে। তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন। আইনজীবীর পেছনে ভালো অর্থ খরচ করতে পারেন। যার কারণে আইন ধনীদের দিকে বেশি ধাবিত হয়। এটিই বাস্তবতা। 
তিনি বলেন, গরীবের অর্থ নেই। ফলে আইন তাদের পক্ষে অনেক সময় থাকে না। কারণ, তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন না। ফলে তারা ভালো আইন উপস্থাপন করতে পারেন না। কিন্তু যারা অর্থ ও সম্পদশালী তারা ভালো আইন, ভালো নজির ও শুনানি উপস্থাপন করতে পারেন। এ কারণেই সরকার অসহায়, দুস্থ ও গরীব বিচার প্রার্থীদের আইনি সেবা দেয়ার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড আইন প্রণয়নের পর আজ ২২ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইড নিয়ে এখনো ধারণা কম। গ্রামের মানুষ এখনো জানে না লিগ্যাল এইড কীভাবে কাজ করে। অনেকে মনে করে লিগ্যাল এইডের কাছে আসলেই রায় পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন, লিগ্যাল এইড একটি মাধ্যম, টাকা পয়সা খরচ করতে হয়। কিন্তু লিগ্যাল এইডের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজেই নিয়েছে। এখানে কোনো বিচার প্রার্থীর একটি পয়সাও খরচ করতে হয়না। এ জন্য লিগ্যাল এইডের ধারণা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিনিয়তই সেই ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। কিন্তু আমার মনে পীড়া দেয়, আদৌ কি আমরা সমান নিরাপত্তা পাচ্ছি, ভেবে দেখবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
তিনি বলেন, গরু-মহিষ নিয়ে শ্বশুর ও জামাইয়ের দ্বন্ধ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সমাজের কিছু অবক্ষয়ের কারণেই এ রকম হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে শিক্ষিত জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আগে নিজেকে চিনুন। যদি নিজেকে না চেনেন তাহলে সফলভাবে দায়িত্ব পালন দুরূহ।
তিনি বলেন, আমি সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই আমি কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে বন্দিদের বক্তব্য শুনেছি। যাদের লিগ্যাল এইড দেয়া দরকার তাদের নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া কিশোর সংশোধনাগারে গিয়েছি। অপরাধে জড়িয়ে শিশুরা সেখানে বন্দি। এ বয়সে যাদের বাবা-মায়ের কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমাজ সচেতন না হওয়ার কারণে শিশুদের এই দুরাবস্থা। 
তিনি বলেন, শিশুর কোনো দোষ নেই। আমরাই বাবা-মা সন্তানদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। বাচ্চা যেটা পারবে না সেটা তার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। এজন্য বাবা-মা দায়ী। আইনজীবী থাকাকালে আমি মহিলা সমিতিতে লিগ্যাল এইডের কাজ করেছি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও মানবতার বিষয়টি এসেছে। 
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তেজগাঁও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা। 
অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার লায়ন মো. আব্দুল ওয়াহহাব, লায়ন জালাল আহমেদ, লায়ন মোহাম্মদ হানিফ, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন, এডভোকেট আব্দুর রহমান, এডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, এডভোকেট মুনমুন নাহার, সহকারী এটর্নি জেনারেল ফারজানা শম্পা ও তামান্না ফেরদৌস প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat