ব্রেকিং নিউজ :
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে কৃষকদের নিয়ে ধান কাটলেন কৃষিমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপ প্রবাহ, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী ভারতের নির্বাচনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মোদির জয় প্রায় নিশ্চিত বিশ্বকাপে নারাইনকে চান পাওয়েল জাতির পিতার সমাধিতে রেলওয়ের নবনিযুক্ত মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস-এর মৃত্যুতে ওবায়দুল কাদেরের শোক প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন: অর্থমন্ত্রী
  • প্রকাশিত : ২০২২-১০-১৩
  • ৪২৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রচারক এবং সুফি স্কলারগণ মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য ব্যক্তি ও সমাজকে উজ্জীবিত করতে একটি সুসংহত আধ্যাত্মিক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এক আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুফি স্কলার ও আন্তর্জাতিক আইনবিদ জোনাথন গ্রানফ সম্মেলনে বলেন, ‘মানব ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো মানব পরিবারের ঐক্যের আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি একটি ব্যবহারিক প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনস্টিটিউটের সভাপতি গ্রানফ বলেছেন, জলবায়ুু পরিবর্তনের পরিস্থিতি এবং পরমাণু অস্ত্রের বিকাশের পটভূমিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক অস্থিরতা এখন সকলের কাছে ‘ভালোবাসাকে হ্যাঁ, বিবেককে হ্যাঁ এবং মানুষের নিরাপত্তাকে হ্যাঁ’ বলার দাবি রাখে।
ইসলামিক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মাইজভা-র দরবারের আওতাভুক্ত প্ল্যাটফম ঢাকা-ভিত্তিক ‘সুফি ইউনিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি’ (সুফিজ) সারা বিশ্ব থেকে সুফি স্কলার ও নেতৃবৃন্দকে সমাবেশের মাধ্যমে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বৈশ্বিক আধ্যাত্মিক অঙ্গনে আহমেদ মহিউদ্দিন নামে পরিচিত আইনবিদ গ্রানফ বলেছেন, ‘দয়া ও করুণা’ এই শব্দগুলো পবিত্র কুরআনের শুরুর শব্দ সকল প্রধান ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে একই বার্তা রয়েছে।
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সম্মেলনে যোগদানকারী এই মার্কিন আইনবিদ বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পবিত্র অন্তর, বিবেক ও প্রজ্ঞার সাথে অন্যদের জন্য তাদের সেবা উৎসর্গ করতে মুসলিম এবং অন্যদের লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।
সুফিজের সভাপতি ও মাইজভা-ার দরবারের বর্তমান সাজ্জাদানশীন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশের পাশাপাশি তুরস্ক, মরক্কো, ভারত, ঘানা থেকে আগত ধর্মীয় স্কলার ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমসাময়িক ইতিহাসের মহান সূফী সাধক সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমেদ মাইজভা-ারীর নাতি সৈয়দ মাশুক ই মাইনুদ্দিন।
মরক্কোর অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ লাখদার দেরফৌফি বলেন, ইসলামের আভিধানিক অর্থ হল শান্তি। অমুসলিম ঐতিহাসিকরা সর্বসম্মত মত পোষণ করেন যে ইসলাম বিশ্বে তরবারির সমর্থন ছাড়াই ছড়িয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা এ বিশ্বাসের প্রথম অনুসারী হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নবী মোহাম্মদ (সা.) কখনোই নিজ থেকে কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি বরং মানুষের কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছানোর মিশনে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কিভাবে আমরা সন্ত্রাসবাদকে (ইসলাম প্রচারের উপায় হিসেবে) গ্রহণ করতে পারি?’
ভারতের আজমীর শরীফের প্রতিনিধি শেখ সৈয়দ সালমান চিশতি মহানবী (সা.) এবং জ্যোতির্ময় আলোর দিশারীরা ভালোবাসার শিক্ষা দিয়ে আলোকিত করেছেন উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান বিশ্বের মানবাধিকার সংকটের পটভূমিতে সমস্যা সমাধানে সুফিদের আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে।
অনলাইনে সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসারে মানবজাতির নাম, ধর্ম বা জাতি জিজ্ঞাসা না করে তাদের সেবা করুন... নিঃশর্ত ভালবাসার সাথে সেবা করুন।’
তুরস্কের একাডেমি অফ সুফি স্কলারস-এর সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ আল-হুসেইনি বলেন, মহানবী হলেন আমাদের অনুসরণ করার জন্য সর্বোত্তম আদর্শ এবং কিভাবে ইসলাম আমাদেরকে সকলের সাথে সম্প্রীতির সঙ্গে অবস্থান করতে উৎসাহিত করে তা অবশ্যই আমাদের জানতে হবে।
তিনি বলেন, নবীর আদর্শ অনুযায়ী, কারো শান্তি বিঘিœত করলে সে মুসলমান হবে না, কারণ ইসলাম বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী ভেদাভেদ না করে রহমত ও শান্তির কথা বলে।

সাবেক মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, প্রতিবেশীদের জন্য শান্তি আনতে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজের মনে শান্তি আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আজকের আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন রাতারাতি মানবজাতির দুর্দশার অবসান বা ফিলিস্তিনি, রোহিঙ্গা বা অন্য কোথাও সমস্যার সমাধান করার সম্ভাবনা নেই, তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সর্বত্র উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য উপাদান, যেখানে অন্যের অধিকার হরণ বা লঙ্ঘন সবসময় শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে আমাদের নবী (সা.) বলেছেন যে একজন মুসলিম যদি একজন অমুসলিমসহ কারোর অধিকার শোষণ করে তবে তিনি বিচার দিবসে দিনে ভুক্তভোগীর পক্ষে দাঁড়াবেন।’
ঘানার বংশোদ্ভূত আফ্রিকান-আমেরিকান শেখ আহমেদ তিজানি ওমর আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশের সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমেদসহ সুফি সাধকদের স্মৃতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো গুণী আধ্যাত্মিক নেতাদের স্মরণ করার পর সম্মেলনে মহানবী মোহাম্মদ (সা.)-এর দরুদ ও প্রশংসাসহ একটি মিলাদ মাহফিলের নেতৃত্ব দেন।
সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ তার সভাপতির ভাষণে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ এবং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক তরিকার সারাৎসার আত্মীকৃত করে বাংলাদেশে উদ্ভূত একমাত্র আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে দেশে এবং এ দেশের বাইরে বিগত এক শতাব্দী ধরে শান্তি ও আত্মশুদ্ধির বাণী ছড়িয়ে দিতে মাইজভান্ডার শরিফের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক মিশন ছাড়াও, মাইজভান্ডার জাতির উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানসিকতা গঠনে ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, সৈয়দ আহমদুল্লাহ গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে এ দরবার প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর ভাতিজা সৈয়দ গোলামুর রহমান এটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান এবং তাঁর নাতি সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমেদ নতুন যুগের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হন।
সৈয়দ মাশুক ই মাইনুদ্দিন তার মূল বক্তৃতায় বলেন, নবী (সা.) কখনোই ধৈর্য্য হারাননি, তাকে কোন সীমা পর্যন্ত ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি কী ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তা বোঝা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যখন সকল জাতি, বর্ণ ও জাতিসত্তার জন্য ন্যায়বিচার এবং সমান অধিকারের কথা আসে, তখন যিনি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মদীনার সনদের মাধ্যমে এর গ্যারান্টি দিয়েছিলেন তিনি হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)।
প্রধান বক্তা বলেন, ‘নবীর অধীনে যুদ্ধ সবসময়ই ছিল রক্ষণাত্মক। তিনি কখনোই সম্পদ বা ক্ষমতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ করেননি। নবী (সা.) তার শত্রুদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেছেন, ক্ষমা করেছেন এবং তাদের নিজের আপনজনের মতো করে ভালো বেসেছেন এবং এই বিশ্বের জন্য করুণা ও ভালবাসার বাতিঘর হয়ে আছেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মনসুর চাভোশি, এফবিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ জসিমুদ্দিন এবং গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat