সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকড়া মহল্লার পাট বন্দরে পাট গুদামে আগুন লেগে ৯ টি পাট গুদাম পুড়ে সয়লাপ হয়ে গেছে। নয়টি পাট গুদামে প্রায় ১৫ হাজার মন পাট ও ৬০ হাজার পাটের বস্তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হয়েছে।
জানা যায় সোমবার দিবাগত রাত প্রায় আড়াই টার দিকে একটি গুদাম থেকে আগুনের উৎপত্তি ঘটে এবং আগুন জলে উঠার পর মুহুর্তের মধ্যে ৯ টি গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত এসে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে । পরে সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর, তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও কামারখন্দ উপজেলার ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে দ্রুত ঘটনা স্থলে এসে তারাও আগুন নিভাতে শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ৬ টি ইউনিট প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে ভোর ৬ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বক্ষম হয়। মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট অগ্নিকান্ড স্থানে কাজ করেন। তবে অগ্নিকান্ডের কোন কারন এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। পাট ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলামের পাট গুদাম থেকে রাত ২ টা ৩৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়।
এই আগুনে ১৪ জন পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ীর ৯ টি গুদামে রক্ষিত আসাদুল ও সোহেলের প্রায় ৪ হাজার মন, মকলেছুর রহমান ডাবলুর ২ হাজার মন ও অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সহ প্রায় ১৫ হাজার মন পাট ও মোঃ শহিদুল ইসলামের পাটের তৈরি প্রায় ৬০ হাজার পাটের বস্তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ আগুনে গুদাম ঘর সহ আনুমানিক প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, অগ্নিকান্ডের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে এই মুহুর্তে কিছুই বলতে পারবেন না। তবে এ ব্যাপারে দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভুমি) ইসরাত জাহান প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পাট ব্যবসায়ী এবং গুদাম মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উল্লাপাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উজ্জল হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইশরাত জাহান, উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর শফিকুল ইসলাম শফি, পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া পাট বন্দর বনিক সমিতির সভাপতি ও উল্লাপাড়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম আমিরুল ইসলাম আরজু জানান রাত ২ টার দিকে পাট ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলামের পাট গুদাম থেকে রাত ২ টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা যায়। আনুমানিক প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর মোঃ সারোয়ার খান জানান আগুন লাগার ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনা স্থলে পৌছাই এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করি। অবস্থার অবনতি দেখে আরো ৫ ইউনিটকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে মোট ৬ ইউনিট ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে ভোর ৬ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বক্ষম হই। এ আগুনে ৯ টি পাট গুদাম ঘরে রক্ষিত পাট ও পাটজাত পণ্য আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পাবনা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ভুইয়া জানান, রাতেই তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভানোর কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা গেলেও এখন পর্যন্ত গুদামগুলোতে পুড়ে যাওয়া পাটগুলোর মধ্যে থেকে ধুয়া বের হচ্ছে। তবে অগ্নিকান্ডের কোন কারন এখন পর্যন্ত তারা জানতে পারেননি। সহকারী পরিচালক আরো বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকেও অগ্নিকান্ডের কারণ তদন্ত করে দেখা হবে।