গোপালগেঞ্জ ১ লাখ ১৯ হাজার শিশুকে করোনা টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। টিকা দান কর্মসূচি শুরুর পর জেলায় শিশুদের টিকা গ্রহণে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। জেলার ৫ উপজেলার ১ লাখ ৮০ হাজার শিশুকে টিকা প্রয়োগের টার্গেট নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। উৎসবমুখর পরিবেশে স্কুলে স্কুলে ৫ থেকে ১১ বয়সী শিশুরা করোনা টিকা গ্রহণ করছে। সিভিল সার্জণ ও জেলা তথ্য অফিস শিশুদের করোনা টিকা গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে অভিভাবকদের মধ্যে কোভিট-১৯ সচেতনা সৃষ্টি হয়েছে। তারা শিুদের টিকা প্রয়োগ করতে জন্ম নিবন্ধনের মাধমে সুরক্ষা এ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করছেন। পরে স্কুলে নিয়ে শিশুদের টিকা প্রয়োগ করাচ্ছেন। গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে টিকাদান উৎসব চলছে।
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জণ অফিসের মেডিকেল অফিসার ও টিকা কর্মসূচীর কো-অর্ডিনেটর ডা. দিবাকর বিশ্বাস বলেন, জেলার ৫ উপজেলায় ৫ থেকে ১১ বয়সী শিশুদের ফাইজার কোম্পানীর কোভিট ভ্যাকসিন প্রয়োগ গত ১১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। আমরা এই জেলার ১ লাখ ৮০ হাজার শিশুকে কোভিট ভ্যাকসিন প্রয়োগের টার্গেট করেছি। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন আমরা ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার শিশুকে কোভিট ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছি। এ পর্যন্ত ১৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে ১ লাখ ১৯ হাজার শিশুকে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলার ১ লাখ ৮০ হাজার শিশুকে কোভিট ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ সম্পন্ন করা হবে। এরপর জানুয়ারী মাস থেকে কোভিটের ২য় ডোজ প্রয়োগ শুরু করা হবে। শিশুদের কোভিট ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে এ জেলায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অভিভাবকরা আমাদের ও তথ্য অফিসের প্রচার প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা সুরক্ষা এ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করছেন। তারপর ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসছেন। সেখানেই আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছেন। করোনা সম্পর্কে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গোপালগঞ্জে শিশুদের ভ্যাকসিন গ্রহণ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোঃ মুঈনুল ইসলাম বলেন,আমরা শিশুদের কারোনা টিকা প্রয়োগে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করতে সড়ক প্রচার অভিযান শুরু করি গত অক্টোবর মাসে। চলতি মাসে আমাদের সড়ক প্রচার অব্যাহত রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেও আমরা সড়ক প্রচার অভিযান অব্যাহত রাখব। সব শিশু যাতে টিকার আওতায় আসে, সেজন্য আমরা সড়ক প্রচার অভিযান চালিয়ে যাব।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জণ ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। এ জেলায় শিশুদের টিকা গ্রহণে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্কুলে স্কুলে গিয়ে যতœসহকারে টিকা প্রয়োগ করছেন। এখানে খুবই চিকন সূচ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই শিশুরা টিকা প্রয়োগের সময় তেমন ব্যাথা অনুভব করছে না। টিকা গ্রহণ নিয়েও শিশুদের মধ্যে কোন ভীতি নেই। এই জন্য টিকা গ্রহণে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অভিভাবক, শিক্ষক মন্ডলী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিক চেষ্টায় এ কার্যক্রম সাফল্যমন্ডিত হচ্ছে। আশা করছি আমরা আমাদের টার্গেটের চেয়েও বেশি শিশুকে টিকা দিতে পারব।
গোপালগঞ্জ সরকারি এসএম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া খানম বলেন, ১১ আক্টোবর থেকে ৩ দিন আমার বিদ্যালয়ের শিশুদের টিকা প্রয়োগ করা হয়। ৩ দিনের মধ্যে আমার বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছে। টিকা গ্রহণের সময় দু’ একজন কেঁেদছে। বাকীরা ব্যথা পায়নি বলে জানিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যতœসহকারে টিাকা প্রয়োগ করেছে। এছাড়া অভিভাবকদের সহযোগিতায় এটি সফল করা সম্ভব হয়েছে। এখন আমরা করোনামুক্ত পরিবেশে শিশুদের নিরাপদে শিক্ষা দিতে পারছি। স্কুলে করেনার ভীতি নেই।
কাশিয়ানী উপজেলার পুইশুর গ্রামের অভিভাবক মিথুন মোল্লা বলেন, করোনা আমার ছেলে মেয়ের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তাই ছেলে-মেয়েদের করোনা মুক্ত রাখতে তাদের টিকা দিয়েছি। এখন করোনা মুক্ত পরিবেশে তারা পড়াশেনা করবে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা শিশুদের টিকা প্রয়োগের ব্যবস্থা করে প্রসংশনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের কারণে শিশুরা করোনামুক্ত থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আর পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হবে না। করোনা মুক্ত হতে আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।