অবিস্মরণীয় জয় দিয়ে দলের দুই সেরা তারকা মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিস খানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়

স্পোর্টস ডেস্ক: –
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ১০১ রানের অবিস্মরণীয় জয় দিয়ে দলের দুই সেরা তারকা মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিস খানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় দিয়েছে পাকিস্তান। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতলো মিসবাহর দল।
সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতলো পাকিস্তান। ১৯৫৮ সালে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামে পাকিস্তান। এরপর ছয়টি টেস্ট সিরিজের মধ্যে তিনটিতে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তিনটি হয় ড্র। ১-১ সমতায় থাকায় তৃতীয় টেস্টটি রূপ নেয় সিরিজ নির্ধারণে। ম্যাচ ও সিরিজ জিততে ডোমিনিকা টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৯ উইকেট। অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার আরো ২৯৭ রান। পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ৩০৪ রানের জবাবে চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে (কাইরন পাওয়েল, ৪) ৭ রান তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে পাক স্পিনার ইয়াসির শাহর ঘূর্ণিতে পঞ্চম দিনের শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ক্যারিবীয়রা। এক পর্যায়ে ৪৪ ওভারে ৯৩ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট হারায় তারা। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র ক্রিজে টিকে ছিলেন রোস্টন চেজ। তাকে সঙ্গ দেয়ার পণ করেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডারসহ শেষের তিন ব্যাটসম্যান- দেবেন্দ্র বিশু, আলজারি জোসেফ ও শ্যানন গাব্রিয়েল। সপ্তম উইকেটে হোল্ডারের সাথে ১১২ বলে ৫৮, অষ্টম উইকেটে বিশুর সাথে ৮৮ বলে ৩০ ও নবম উইকেটে ৭০ বলে ১৬ রান যোগ করেন চেজ। এতে ম্যাচ ড্র করার দারুন এক সুযোগ তৈরি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে। তখন দিনের খেলার ৫২ বল বাকি। শেষ উইকেটে গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে সেই লড়াই শুরু করেন চেজ। ৮৭তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ পান এ ব্যটসম্যান। শেষ দিকে সমীকরণ দাঁড়ায়, আর ১২ বল ক্রিজে টিকে থাকতে পারলেই টেস্ট ড্র করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর এই ১২ বলের মধ্যে ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেট তুলে নিতে পারলে অবিস্মরণীয় জয়ের স্বাদ নেবে পাকিস্তান। ৯৬তম ওভারে বল হাতে আক্রমণে আসেন ইয়াসির। স্ট্রাইকে ছিলেন গ্যাব্রিয়েল। নন-স্ট্রাইকে ছিলেন চেজ। মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রথম পাঁচ বল ভালোভাবেই সামাল দেন গাব্রিয়েল। কিন্তু শেষ বলে ধৈর্য্য হারিয়ে ইয়াসিরের বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে স্টাম্প ভেঙ্গে যায়। আর সেই সঙ্গে শেষ হয় ম্যাচ আর অবিস্মরণীয় জয় দিয়ে মিসবাহ-ইউনিসকে বিদায় দেয় সফরকারী পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০২ রানে গুটিয়ে গেলেও ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন চেজ। ৩৬৬ মিনিটে ২৩৯ বল মোকাবেলা করে ১২টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকান চেজ।পাকিস্তানের ইয়াসির ৯২ রানে ৫ উইকেট নেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১১তম বারের মতো পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন ইয়াসির। আর পুরো সিরিজে ২৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাই সিরিজ সেরার পুরস্কার উঠে ইয়াসিরের হাতেই। তবে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ৩৭৬ ও ১৭৪/৮ডি, ৫৭ ওভার (ইয়াসির ৩৮*, ইউনিস ৩৫, জোসেফ ৩/৫৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪৭ ও ২০২, ৯৬ ওভার (চেজ ১০১*, হেটমায়ার ২৫, ইয়াসির ৫/৯২)।
ফল: পাকিস্তান ১০১ রানে জয়ী।
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী পাকিস্তান।
ম্যাচ সেরা: রোস্টন চেজ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।
সিরিজ সেরা: ইয়াসির শাহ (পাকিস্তান)।