অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলতি অর্থবছর শেষে দেশের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
আজ সংসদে উত্থাপিত ‘বাজেট ২০২১-২২: দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর)’ পর্যন্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত জুলাই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।’ বৈশ্বিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলেও অর্থমন্ত্রী জানান।
রাজস্ব আদায়ে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর আদায় আশাব্যাঞ্জক উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব আহরণ আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। তাছাড়া, চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে উন্নতি সাধিত হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি অর্থবছর আমাদের সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বছর। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, করোনা ভাইরাসের দীর্ঘায়িত প্রভাব মোকাবিলা, আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ২০১৮-এ বর্ণিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষ্য অর্জনের প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখবো।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে এবং একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি বিনির্মাণে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি। একজন অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি বলতে চাই, আমাদের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি, আর্থ-সামাজিক অভিঘাত মোকাবিলায় সরকারের সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা এবং সর্বোপরি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় অর্থনীতির প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।’
তিনি প্রতিবেদনে জানান, করোনা অতিমারি মোকাবিলায় সরকার কর্মসংস্থানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, শোভন কর্ম পরিবেশ ও সুস্থ শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বিধিমালার বিধানাবলি এবং শ্রমিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে কৃষির উন্নয়নে ভর্তুকি, সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ প্রণোদনা ও সহায়তা কার্ড, সেচ সুবিধা ও খামার যান্ত্রিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ ও বিপণন, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা ইত্যাদি কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৪,৭৮১.৮২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে রেলওয়ের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য প্রণীত ২০ বছর মেয়াদী (২০১০-২০৩০) মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। হালনাগাদকৃত মাস্টার প্ল্যানে ৬টি পর্যায়ে (২০১৬-২০৪৫) বাস্তবায়নের জন্য ৫ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হওয়ার পর রেলওয়ের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি আধুনিক গণপরিবহন মাধ্যমে পরিণত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।