ব্রেকিং নিউজ :
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন ভোলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ১১২টি পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন বরিশালে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা কাপ্তাই হ্রদে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শেষ হল দুর্গোৎসব বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রাত ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা : ধর্ম উপদেষ্টা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার এনসিপির নেতাকর্মীদের, সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখার প্রতিশ্রুতি জি৭ মন্ত্রীদের বিশ্বখ্যাত প্রাণিবিজ্ঞানী ড. জেন গুডলের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৭-১৭
  • ৩৯২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
আমদানি-রপ্তানির পার্থক্য বিপদ ডেকে আনতে পারে
যেকথা সারাদেশের লোকেরা বলে আসছেন এতদিন ধরে, একটি দৈনিকে দেখলাম সেই কথাই অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর সাহেব এখন বলছেন। তিনি বলেছেন, আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্য অর্থনীতি ও ব্যাংকিং-এ বাড়তি বিপদ ডেকে আনতে পারে। তিনি এও বলেছেন, ইতোমধ্যেই এই সমস্যা নানা ঝুঁকি তৈরি করেছে। কোনো কোনো কাগজ আবার গভর্নরকে উদ্ধৃত করে বলেছে, সাম্প্রতিক কালের ব্যাংক খাতের কিছু কার্যাবলী মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তিনি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। একটি প্রশ্নও তিনি তুলেছেন— আমদানি তথ্যের ওপর। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি বেশি হলে তার প্রতিফলন পাওয়া যায় রপ্তানিতে। কারণ অধিকাংশ কাঁচামালই আমদানি হয় রপ্তানির কাজে। কিন্তু তার সন্দেহ রপ্তানি সেভাবে বাড়ছে না। তিনি যে-তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশ হারে। এর বিপরীতে আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এই তথ্যই যথেষ্ট ব্যাংকখাতের বর্তমান সমস্যা অনুধাবনে। এই মুহূর্তে এসব আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন তার ষান্মাষিক মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজে ব্যস্ত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। এখন এর সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংককে তার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করতে হবে। মুদ্রানীতিতে সাধারণত ঋণের কথাই বলা হয়।
 
এবারও কি তাই করা হবে? জানি না। কিন্তু পরিস্থিতি এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই মুহূর্তে ব্যাংকে ব্যাংকে আমানতের (ডিপোজিট) সংকট চলছে। সুদের হার ঋণে হবে ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৬ শতাংশ। ৬ শতাংশ হারে আমানত পেতে ব্যাংকাররা অসুবিধায় ভুগছেন। এ কারণে ৯ শতাংশ হারে ঋণ দেওয়ার কাজ কেউ শুরু করেছে, কেউ করতে পারেনি। অবস্থা বিপাকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, তাড়াহুড়া করে ৯ শতাংশ হারে ঋণ দেওয়া যাবে না। এর জন্য সময় দরকার। প্রকৃতপক্ষে এই সমস্যাটা তৈরি হলো কীভাবে? এর ইঙ্গিত গভর্নর সাহেব দিয়েছেন। রপ্তানি কম, আমদানি বেশি। আমদানি বেশি করতে গিয়ে গ্রাহকরা ঋণ নিয়েছেন বেশি এবং কিছুসংখ্যক ব্যাংক হেলায় ফেলায় যাকে তাকে ঋণ দিয়েছে। ফলে ঋণের সম্প্রসারণ ঘটেছে মারাত্মক হারে। এই অবস্থা আরেকবার হয়েছিল সরকারের প্রথম মেয়াদে। অবিবেচনাপ্রসূত ঋণ সম্প্রসারণের ধাক্কা তখন লাগে শেয়ার বাজারে। ঐ বাজারে উল্লম্ফন ঘটে। কিছু লোক হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয় ফকির। এবারের সমস্যা অবশ্য শেয়ার বাজারের দিকে ধাবিত হয়নি। এবার ঋণ দেওয়া হয়েছে বেশি। আমদানি হয়েছে বেশি। অবশ্য তার প্রতিফলন রপ্তানিতে নেই। ফলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রচুর টাকা নির্বাচনের বছর বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তা তো হয়েছে কিন্তু দেশীয়ভাবে ব্যাংক খাত এখন মহা সংকটে। এই সংকট বৈদেশিক খাতে গড়িয়েছে। অত্যধিক ঋণ গেছে আমদানিতে। রপ্তানি হয়েছে কম। রেমিটেন্স আশাপ্রদ নয়। অতএব যা হবার তাই হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি ১১ মাসেই ১৭ বিলিয়ন ডলারের উপরে উন্নীত হয়েছে। সেবাখাতে আয় পর্যাপ্ত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে ‘কারেন্ট একাউন্টে’। কারেন্ট একাউন্টে ঘাটতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এখন তা ৯ বিলিয়ন ডলারের ওপর। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আগের মতো ঊর্ধ্বমুখী নয়। ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে তা উঠানামা করছে। এর নিচে তা নামলে তা হবে বিপর্যয়কর। অথচ ‘কারেন্ট একাউন্ট’ ঘাটতি ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই ঘাটতির টাকা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে দিতে হলে পরিস্থিতি গভর্নরের পক্ষে সামাল দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার হবে। অধিকন্তু দেখা যাচ্ছে ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ পরিস্থিতি জটিল। যেখানে তা ছিল বহুদিন ধরে ইতিবাচক, এবার তা নেতিবাচক। খুবই খারাপ খবর। এসব পরিস্থিতিতে যদি কোনো কারণে আইএমএফ পর্যন্ত দৌড়াতে হয়, তাহলে এটা হবে খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আশা করি, সরকার এসব ব্যাপার বুঝতে পারছেন। এই যে পরিস্থিতি যার প্রেক্ষাপটে গভর্নর সাহেব সবাইকে এখন সতর্ক করছেন তার থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? এবং এই উপায়টা আগামী মুদ্রানীতিতে থাকতে হবে। অবশ্যই থাকতে হবে। আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি আমদানির প্রতিফলন রপ্তানিতে নেই অথচ প্রচুর ঋণ এই আমদানি খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। এর ফলে ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম সমানে বাড়ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমতাবস্থায় আমি মনে করি, ‘মনিটারি পলিসি’তে ঋণ সম্প্রসারণের ওপর কড়া নজরদারি রাখতে হবে। ১৭-১৮-১৯ শতাংশ ঋণপ্রবৃদ্ধি যাতে না ঘটে। এখন বড় কাজ ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। গভর্নর সাহেব বলেছেন, ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনদিনের ব্যাংক, একবছরের মধ্যে আমানতকারীদের সকল টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিলে কেন প্রশ্ন জাগবে না! এই অনুচিত ও গর্হিত কাজটি কীভাবে ঘটল? কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মনিটরিং করল না কেন? এসব অনেক প্রশ্ন।  কারণ ঐ ব্যাংকের সংকট ‘পেন্ডোরার বক্স’ খুলে দেয়। একের পর এক ব্যাংক ‘ফান্ড’ সংকটে পড়ে। অর্থাত্ আমানতের সংকট। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে দেশে আমানত বৃদ্ধি পাচ্ছে কম। সর্বোচ্চ বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এবং সর্বনিম্ন হার হচ্ছে ৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমানত বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ। অথচ ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১৭-১৮ শতাংশ। কোনো কোনো ব্যাংক আরও বেশি। অতএব, দেখা যাচ্ছে আমদানি-রপ্তানির পার্থক্যের সঙ্গে আমানত ও ঋণ বৃদ্ধির একটা সম্পর্ক আছে। আমদানি-রপ্তানিতে যেমন ‘মিসম্যাচ’ দেখা যাচ্ছে, তেমনি মিসম্যাচ আমানত ও ঋণ বৃদ্ধিতে। অতএব এবারের কাজ হচ্ছে এই দুটো ‘মিসম্যাচ’ কে শুধরানো। এর জন্য প্রথমেই আমদানি ক্ষেত্রে তদারকি শুরু করা দরকার। এক টাকার মাল, দুই টাকায় আনা হচ্ছে—এটা তো ব্যাংকাররা জানে। অন্তত না জানার কোনো কারণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররাও জানে। এখন দরকার তা বন্ধ করা। সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন ‘আইটেমওয়াইজ’ আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করা দরকার। করে আমদানি বাণিজ্যের একটা ‘ভদ্র ব্রেক’ কষা দরকার। আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমেই টাকা পাচার হয়। এটা ঐতিহাসিক মাধ্যম। ব্যাংকাররা সাহায্য না করলে এই কাজ ব্যবসায়ীরা করতে পারে না। অতএব রপ্তানির সঙ্গে তাল রেখে আমদানি তথ্য বিচার করতে হবে। ভোগ্যপণ্য আমদানির তথ্য আমি বুঝি না। এত চিনি, পিঁয়াজ, রসুন, সয়াবিন সত্যি সত্যি দেশের মানুষ ভোগ করে কি না তাতে এখন যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। এসব দেখা দরকার। আমদানি-রপ্তানির ‘মিসম্যাচ’ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দরকার ঋণ ও আমানতের ‘মিসম্যাচ’ কমানো। আমানতের বাজারকে অস্থিতিশীল করা ঠিক হবে না—এ কথা আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি। অথচ এটা ঘটে যাচ্ছে। অবিবেচক ব্যাংকাররা ক্ষণে আমানত বিদায় করে, ক্ষণে আমানতের জন্য মানুষের কাছে ধরনা দেয়। এটা ঠিক নয়। আমানতের বাজার স্থিতিশীল রাখা দরকার। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ। অথচ ব্যাংকাররা বলছে ৬ শতাংশের ওপরে আমানতে সুদ দেবে না। এর অর্থ মূল্যস্ফীতিই খেয়ে ফেলবে সুদ। এতে আমানত বাড়ানো কঠিন হবে। ইতোমধ্যেই খবর হচ্ছে, বড় বড় ব্যবসায়ী যাদের অনেক সময় অলস ফান্ড থাকে তারা ৬ শতাংশ হারে ব্যাংকে আমানত রাখতে রাজি নয়। কেন রাজি হবে? এমতাবস্থায় আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে এই ক্ষেত্রে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া। ‘সিঙ্গেল ডিজিট’-এ ঋণ দেওয়ার অজুহাতে আমানতকারীদের শায়েস্তা করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। আরেকটি কথা বলব। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম নীতির কোনো অভাব নেই। বড় ঋণ, ছোট ও মাঝারি ঋণ, ঋণ কেন্দ্রীভূতকরণ ইত্যাদি থেকে শুরু করে এমন কোনো বিষয় নেই যার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিমালা নেই। এতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে এসব নিয়ম নীতি বাস্তবায়ন করা। এই ক্ষেত্রে ক্ষমার অযোগ্য শৈথিল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাদের বাস্তবায়ন ক্ষমতা যদি পুরোপুরি থাকত তাহলে আজ ব্যাংকগুলোর এই অবস্থা হয় না। আমি এই সুযোগে বড় বড় ঋণগুলোকে ‘ক্লোজ মনিটরিং’-এর আওতায় আনতে বলব। অনেক ‘গ্রুপ অব কম্পানি’ অকারণে তাদের ঋণ বাড়াচ্ছে। ব্যাংকাররাও তাদেরকে ঋণ দিতে পছন্দ করে নানা কারণে। আমার ধারণা অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের বড় ঋণ ভীষণ বড় সংকট তৈরি করবে। মুদ্রানীতিতে এ বিষয়টি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা থাকে কি না তা লক্ষ করতে হবে।
 
n  লেখক: ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ, সাবেক শিক্ষক,

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat