কোটা বাতিলের ফলে উদ্ভূত সমস্যার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে
নিজস্ব প্রতিনিধি:- কোটা বাতিলের পর সরকারি চাকরিতে বিশেষ কোনো নিয়োগ মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা
।
রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান।
কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুখ হোসান বলেন, ‘আমরা সরকারের সকল সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসাবে দেখেছি। কিন্তু সম্প্রতি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তাতে ছাত্রসমাজ সন্তুষ্ট নয়। আমরা কখনো কোটা বাতিল চাইনি। পাঁচ দফার আলোকে কোটার সংস্কার চেয়েছি।’
এ সময় তিনি সরকারকে তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহব্বান জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, হামলাকারীদের বিচার করতে হবে এবং পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কার করতে হবে।
সংগঠনটির যুগ্ম- আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আংশিক প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করিনি, আমরা সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কার চেয়েছি। আমরা কখনো কোটার বাতিল চাইনি। কোটা বাতিলের ফলে উদ্ভূত সমস্যার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
‘‘এছাড়াও সরকারি চাকরিতে কোন বিশেষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশেষ নিয়োগ ছাত্র সমাজ মেনে নিবে না। সেই সাথে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান, জসিম উদ্দীন, মশিউর রহমানসহ আরো অনেকে।
গত ৪ অক্টোবর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন জারির পর বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) জানিয়েছে, ৪০তম বিসিএসে কোটা নয়, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।
বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালে দফায় দফায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারধর করে।
এক পর্যায়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনকারীদের মারধর করে।
গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে সাত সচিবকে নিয়ে
একটি কমিটি গঠন করে সরকার।
১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়। সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরে কমিটি।
গত ৩ অক্টোবর কমিটির কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।