বিনোদন ডেস্ক:- আবারো একটি নতুন সুখের বার্তা দিলো এবারের ঈদের ছবি। কারণ অনেক হিসেব কষে ফেলা চলচ্চিত্রের রোদ্দুর যখন বারবার হতাশার খবর দিচ্ছিল, শাকিব খান ছাড়া ছবি অচল, ইন্ডাস্ট্রি শেষ, সেখানে পোড়ামন টু-এর সাফল্য আশার আলো দেখিয়েছে। যদিও এই সাফল্যের পেছনে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কৌশলী যত্ন রয়েছে। দেশসেরা সিনেমা হলগুলো প্রথম সপ্তাহগুলোতে সিনেমা প্রজেকশন করা অতঃপর বাড়তি ক্যাম্পেইন। ছবিটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ডামাডোল।
তাই সুপার হিরোর পরের অবস্থানেই ছিল পোড়ামন টু।
তবে দিন শেষে যাই হোক না কেন, চলচ্চিত্রের জন্য এটি সুখের খবর। যদিও হল সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার যে রীতিতে চলমান আমাদের ইন্ডাস্ট্রি, তাতে খামতি নেই! বরং সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে ইন্ডাস্ট্রি টেকাতে হলে, এর বাণিজ্যের প্রসার বাড়াতে হলে সত্যিকার অর্থেই প্রডাকশন হাউজ বাড়াতে হবে। নীতির কৌশলেই ব্যবসায়ীদের এমনকিছু সুবিধা দিতে হবে যেখানে উত্সাহী লগ্নিকারীরা নিশ্চিন্তে ছবিতে লগ্নি করতে পারে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে কলকাতার এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা খুব দারুণ কথা বলেছেন। তার মতে, ‘বাংলাদেশে লগ্নিকারীর অভাব নেই। কিন্তু ব্যবসায়িক কৌশলটা জানা লোকের অভাব রয়েছে। অর্থাত্ কোনো লগ্নিকারী যদি জানতে পারেন যে, তার লাভ না হলেও লোকশান গুনতে হবে না তাহলেও অগণিত লগ্নিকারী পাওয়া যাবে বাংলাদেশে।’
জানিয়ে রাখা ভালো, প্রযোজক আর লগ্নিকারী কিন্তু এক জিনিস নন। যাই হোক, দেশের বাইরে থাকা এসকে মুভিজের কর্ণধার ওপারের বাঙালি হয়ে এদেশে দু-চারটে ছবি করেই বুঝে গেছেন যে, বাংলাদেশে অগণিত লগ্নিকারী রয়েছেন, যাদের শুধু টাকাটা ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি দরকার। তাই তারা এদেশে অফিসসহকারে ছবি নির্মাণ করতে চান। এর অর্থ দাঁড়ায়, এদেশে সেই মেধাসম্পন্ন প্রযোজক নেই বলেই আজকে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির এই সঙ্কট এবং এটিই অপ্রিয় সত্য।
বিচ্ছিন্নভাবে হলেও আরটিভি তাদের নিজস্ব প্রযোজনায় নিয়মিত ছবি নির্মাণ করছে। তারা তাহসান শ্রাবন্তীর ‘যদি একদিন’, অপু বিশ্বাস-বাপ্পীর ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টু’ ছবি নির্মাণ করছেন। এদিকে ছোটপর্দার তারকা সিয়ামের সাফল্য আরো কয়েকজন টিভি তারকাদের উত্সাহ জোগাবে এটিই স্বাভাবিক। যদিও তার পূর্বসূরি আরিফিন শুভ তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রত্যাশিত ফল পাননি। তবুও শুভ অধ্যাবসায়ে রয়েছেন। তার এই তীব্র অধ্যবসায়কে স্যালুট জানাতেই হয়। সত্যিকারের চলচ্চিত্র প্রেমিক বলেই আরিফিন শুভ দাঁত কামড়ে পড়ে আছেন এই হতচ্ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে!
তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মেধাবী এবং আধুনিকমানের প্রযোজক, যিনি লগ্নিকারী থেকে টাকা নিয়ে ছবি বানিয়ে তার নিশ্চিত গ্যারান্টি দিতে পারবেন। কারণ এখন শুধু হলের ডিস্ট্রিবিউটররা টাকা দেবে সেই আশায় কেউ ছবি বানান না। গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন, ডিজিটাল কপিরাইট, নেটফ্লিক্সের মতো বড় বড় প্লাটফর্ম, চলচ্চিত্রের ইনার ব্র্যান্ডিংসহ নানা উপায়ে টাকা উপার্জন সম্ভব। কিন্তু এ সবকিছু সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজন চৌকস প্রযোজক। তারই অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। তবে এরই ভেতরে খুব ধীরে হলেও লাইভ টেকনোলজিস, শাপলা মিডিয়া, বঙ্গবিডিসহ বেশকিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগী হয়েছে এটিই সবচেয়ে আশার কথা। কারণ আগামী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এদের হাতেই পরিচালিত হবে, যারা শুধু হলের সিট গুনে অর্থ উপার্জনের জন্য হা-হুতাশ করবে না, বরং ডিজিটালি নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের ফায়সালা করবে।
তাই টকশো বা বিভিন্ন আড্ডা-সেমিনারে যারা হল কমে যাচ্ছে বলে নাকে কাঁদছেন তারা নিজেদের মূর্খতাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন দর্শকদের কাছে। অথচ এই দর্শকরাই খবরে পড়ছেন কৃষ, রা ওয়ান, অ্যাভেঞ্জার ছবিগুলো তাদের শুধু টি-শার্ট, ব্রেসলেট বিক্রি করেই কোটি কোটি টাকা ঘরে তুলেছে। এই লাইনগুলো পড়ে মনেই হবে দূরের স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন না দেখা শুরু করলে, কাজে না হাত দিয়ে গুটিয়ে বসে থাকলে যে নিভু নিভু প্রদীপ জ্বলছে ইন্ডাস্ট্রিতে তা আরো নিঃশেষ হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না। সর্বশেষ ঢাকা সফরে বরেণ্য নির্মাতা অপর্ণা সেনও বলে গেছেন, ‘সিনেমা হলের দিন শেষ। এখন ছবি বিপণনের পথই বদলে গেছে।’ তাই প্রয়োজন সত্যিকারের মেধাবী প্রযোজক।
যে যে উপায়ে একটি চলচ্চিত্র থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব
১. ভালো স্ক্রিপ্ট আবেদন করে একাধিক দেশ ফ্রান্স, ইতালি থেকে শুরু করে একাধিক প্রতিষ্ঠান টেকনিক্যাল সাপোর্ট আদায় করতে পারে। যা অর্থমূল্য অনেক।
২. ছবি রিলিজের আগে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে ইন ব্র্যান্ডিং করে অর্থ উপার্জন।
৩. ডিজিটাল কপিরাইট বিক্রি করে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন।
৪. ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে ছবি থেকে অর্থ উপার্জন।
৫. নেটফ্লিক্সসহ আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে ছবিস্বত্ব বিক্রি, যারা বিশ্বমানের এয়ারলাইন্স ও অভিজাত স্থানে ছবি প্রজেকশন করে থাকে।
৬. দেশের বাইরে বিশ্ব বাঙালিদের টার্গেট করে ছবি রিলিজ।
৭. একাধিক দেশীয় অ্যাপ থেকে।
৮. স্যাটেলাইট টিভিস্বত্ব বিক্রি।
৯. ছবির মেরিট অনুযায়ী এর বিভিন্ন সুভ্যেনিয়র বাজারে বের করে তা থেকে অর্থ উপার্জন।
১০. দেশী সিনেমা হল থেকে উপার্জন।
১১. বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কর্পোরেট হলরুমে প্রজেক্টরে ছবি প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জন। (যে উপায়ে সিনেমা বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন দেশবরেণ্য নির্মাতা তারেক মাসুদ)