‘তাঁর পথচলা তরুণদের সুন্দর জীবন নির্মাণে পথ দেখাবে’ ফেরদৌসী মজুমদারের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
আমার অভিনয়ের গুরু আবদুল্লাহ আল মামুন আর লেখালেখি শুরু করেছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেরণায়— বলছিলেন বাংলাদেশের অভিনয় জগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। অভিনয় জগতে পাঁচ দশকের পথচলা আর জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প নিয়ে ফেরদৌসী মজুমদারের নানা লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘যা ইচ্ছা তাই’ গ্রন্থটি। গতকাল শুক্রবার বিকালে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে।
লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে এসে তিনি জানান, আমি যা লিখি, তা জীবন থেকে লিখি। আমি সত্যি কথা উচ্চারণ করি। আজ যখন পরিবারের উত্সাহে লিখতে এসেছি, তখন মনে হয় সময় যেন ফুরিয়ে এসেছে। আমি নাটকের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেইনি। কারণ, আমি বাবা-মা, ১৪ ভাই-বোনদের নিয়ে বিশাল পরিবারে বড় হয়েছি। এসব চরিত্র থেকেই আমি নাটকে অভিনয় করেছি।
জার্নিম্যান থেকে প্রকাশিত বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন ফেরদৌসী মজুমদারের শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, নাট্যজন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহম্মদ জাহাঙ্গীর ও সানবিম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা নীলুফার মঞ্জুর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অভিনেতা মারুফ কবির।
আনিসুজ্জামান বলেন, ‘যা ইচ্ছা তাই’ বইটিতে ফেরদৌসী মজুমদার সমান্তরালভাবে পরিবার ও অভিনয় জীবনের কথা বলেছেন। বইটির পাঠক কখনও তার অভিনয় জীবন থেকে পরিবার জীবনে চলে যায়, আবারও তার অভিনয় জীবনে ফিরে আসে। বইটিতে অনেকগুলো চরিত্র উঠে এসেছে।
শামসুজ্জামান খান বলেন, এটি কোনো সাধারণ বই নয়। নাটকের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বইটি পড়া উচিত। তাহলে তারা সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।
তাসমিমা হোসেন বলেন, এখন এমন এক সময় ‘যা ইচ্ছা তাই’ চলছে। কিন্তু ফেরদৌসী মজুমদার বইটিতে যে সময়ের কথা বলছেন সেটা আলাদা ছিল। বাংলাদেশের এক স্বর্ণযুগের কথা উঠে এসেছে বইটিতে। আর অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার ছিলেন সেই স্বর্ণযুগের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। তিনি তরুণদের উদ্দেশে যেভাবে বলেন, তার অভিজ্ঞতার কথা। সেটাও আমাদের জন্য খুব জরুরি।
আনিসুল হক বলেন, খুব মন খারাপ করা সময়ের মধ্যে রয়েছি। স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রগুলো কমে আসছে। ‘যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’ এখন যেন নেই। সেই সময় ফেরদৌসী মজুমদারের ‘যা ইচ্ছা তাই’ বইটি প্রকাশিত হলো। ফেরদৌসী মজুমদার আলোক দ্বিপান্বিতার মতো আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। প্রথমে অভিনয়ে এখন লেখায়। তার স্নিগ্ধতা, পরিশীলন, অধ্যবসায়, নিষ্ঠা সবকিছুই অনুকরণীয়। তার জীবনের পথচলা বর্ণনা করেছেন বইটিতে। তার পথচলা তরুণদের সুন্দর জীবন নির্মাণে পথ দেখাবে।
নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই বইটিতে তার যাপিত জীবনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়। তিনি পরিবার ও সমাজকে যেমন করে দেখেছেন, নানা আন্দোলন, সমাজ পরিবর্তন, রাষ্ট্র পরিস্থিতি তিনি কেমন করে দেখেছেন—তা উঠে এসেছে ‘যা ইচ্ছা তাই’ বইটিতে। যারা একজন অভিনেত্রীর ভেতর দিয়ে সময়কে দেখতে চান, তার সাংগঠনিক তত্পরতা, ক্রিয়াশীলতা দেখতে চান, তাদের জন্য এ বইটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নীলুফার মঞ্জুর বলেন, শিক্ষক হিসেবেও ফেরদৌসী খুব উঁচুমানের। তার কথা শুনতে বাচ্চারা খুব পছন্দ করে। শুধু বাচ্চারাই নয়, টিচার্স রুমেও আমরা তার কথা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনি।
মুহম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ফেরদৌসীর বিপুল কর্মকাণ্ডের মধ্যে নতুন পালক যোগ হলো- সেটা লেখালেখি। তিনি লেখার দিকে জোর দিয়েছেন তা আমাদের নতুন স্বাদ এনে দেবে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ফেরদৌসীর লেখার ভঙ্গি একেবারে আলাদা। সে সহজ করে লেখে। বাচ্চাদের জন্য বেশকিছু বই অনুবাদ করেছে সে। আমরা চাইব, ফেরদৌসী অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখির দিকে আরেকটু মন দেবে এবং তা অবশ্যই সময়ের সঙ্কট বিবেচনা করে।